No announcement available or all announcement expired.
sandipta_chatterjee

Medianest: Remembering Sandipta Chatterjee

 

​A joint endeavour of Sandipta's friends and
School of Media, Communication and Culture, Jadavpur University




ju
 

এই বেদনা ক্ষমা করো / ২

 
Seemantini Gupta (June 30, 2016)
 
FacebookTwitterGoogle+PinterestLinkedInWhatsAppShare
এই_বেদনা_ক্ষমা_করো

শিল্পীর চোখে ঊরুন্দজেরি জাতির থেকে জন ব্যাটম্যানের জমি ক্রয়ের চুক্তি (Batman’s Treaty) স্বাক্ষর (১৮৩৫)। অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসীদের থেকে ইউরোপীয়দের হাতে সরাসরি জমি হস্তান্তরের প্রথমদিককার একটি নথিভুক্ত ঘটনা।

« প্রথম পর্ব / Part 1

সামনে যে মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন, কোথায় যেন দেখেছি তাঁকে। ওই চোখ, ওই নাক, চুলের ছাঁটেও খুব মিল। কার মতো দেখতে যেন, কার মতো…? আরে! এই মুখ তো আমি চিনি। রোজ আয়নায় একেই তো দেখি আমি।

মা’কে দেখে মনের মধ্যে পর পর, খুব দ্রুত, চলে যাচ্ছিল শব্দগুলো। শব্দ আর দৃশ্য, অতীত আর বর্তমান, স্মৃতি আর বাস্তব ততক্ষণে মিলেমিশে একাকার। তিরিশ বছর পরে মা’কে যে ফিরে পেলেন মেয়ে।

ali_cobby_eckermann

আলি কবি একারম্যান

বলছিলেন আলি কবি একারম্যান। অস্ট্রেলিয়ার ‘আদিবাসী’ লেখক আলি। কিছু দিন আগে কলকাতায় এসেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুবাদ কর্মশালার অতিথি হিসেবে। কবিতার ফাঁকে ফাঁকে বুনে দিচ্ছিলেন তাঁর জীবন-গাথা। নির্মম, অদ্ভূতুড়ে সব গল্প। শুনতে শুনতে বারবারই মনে হচ্ছিল, এ রকম হতে পারে নাকি? কেনই বা হবে?

হতে যে পারে, হয়েছিল যে শ’য়ে শ’য়ে, হাজারে হাজারে তা সম্প্রতি ফের মনে করিয়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুড। আট বছর আগে সে দেশের পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে দেশের আদি বাসিন্দাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি। এর আগের বারই এই বেদনা ক্ষমা করো / ১) আরও নানা রাষ্ট্রনেতার নতজানু হওয়ার গল্প বলেছিলাম। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন কানাডার নব্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও। সেই সব রাষ্ট্রনেতার মতোই দেশের ভূমি-সন্তানদের ওপর অকথ্য অত্যাচারের কাহিনী ভুলতে চাননি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রুড-ও। তাই প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পরে পরেই দেশের মানুষকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, শ’দুয়েক বছর ধরে যে ‘ভাল আছি, সবাই মিলে’ কাহিনীর মোড়কে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে অস্ট্রেলিয়া, সেটা নেহাতই মনগড়া। সেটাকে ফেলে দিয়ে নতুন ভাবে ইতিহাস লেখার সময় এসে গিয়েছে। আর সেই ইতিহাসটা লিখতে হবে নতজানু হয়ে।

কেভিন রুড

কেভিন রুড

নিন্দুকেরা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপের পেছনেও রাজনৈতিক অভিসন্ধি ও ভোটব্যাঙ্কের গল্প খুঁজে বার করেছিলেন। আমাদের সে-সবে উৎসাহ কম। তার থেকে ফিরে যাওয়া যাক আলি কবি-র (ক’জন কবির নামেই ‘কবি’ থাকে, বলুন তো!) বড় হওয়ার গল্পে।
আর পাঁচটা ‘আদিবাসী’ বাচ্চার মতো আলির জীবনের প্রথম কয়েকটা বছর কেটে যায় অনাথ আশ্রমে। কেন অনাথ আশ্রমে, বুঝতে গেলে যেতে হবে ১৭৮৮ তে। যখন অস্ট্রেলিয়ায় পা রাখেন ইউরোপীয় উপনিবেশকারীরা।

গবেষকেরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়ার আদি বাসিন্দাদের ইতিহাস সত্তর হাজার বছরের পুরনো। তারাই সেই মহাদেশের প্রথম ও প্রকৃত বাসিন্দা। আঠারো শতকের শেষের দিকে যখন সেখানে ব্রিটিশ উপনিবেশকারীদের পা পড়েছিল, তখন এই ভূখণ্ডে চারশোরও বেশি আলাদা আলাদা গোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। তাঁদের ভাষা আলাদা, আলাদা বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানও । কিন্তু নানা মিলের মধ্যে অবশ্যই সর্ব প্রথম এবং সর্ব প্রধান, তাঁরা সকলেই অস্ট্রেলিয়ার ভূমি-সন্তান, দেশের সাংস্কৃতিক শিকড় লুকিয়ে তাঁদেরই জীবন, শিল্প, কৃষি, কৃষ্টির মধ্যে।

আমেরিকার মহাদেশ দু’টিতে যেমন হয়েছিল, সেই একই কায়দায় ‘বর্বর’ আদি বাসিন্দাদের ‘মানুষ’ করার ‘গুরুভার’ গিয়ে পড়ে ‘সভ্য’ ইউরোপীয় উপনিবেশকারীদের কাঁধে। ‘সভ্য’ করার অন্যতম উপায় হিসেবে উপনিবেশকারীরা বেছে নেন একটা বেদম নির্মম প্রক্রিয়া। তাঁরা ঠিক করেন, ভূমি-সন্তানদের শিশুদের তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। ‘অসভ্য’, ‘বর্বর’ মা-বাবাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিলেই তারা দিব্বি সভ্যভব্য হয়ে উঠবে; গায়ের রংটা হয়তো হাল্কা বাদামিই থেকে যাবে, কিন্তু ভেতরটা ধপধপে সাদা হয়ে যেতে বিশেষ সময় লাগবে না!

যেমন ভাবা, তেমনই কাজ। সিডনি থেকে মাইল পনেরো দূরে পারামাট্টায় তৈরি করা হয় দেশের প্রথম ‘নেটিভ ইনস্টিটিউশন’। মূল লক্ষ্য, ভূমি-সন্তানদের পরিবার থেকে কেড়ে এনে অনাথ আশ্রমে বড় করে তোলা, ইংরেজি ভাষায় চোস্ত করে তোলা, আস্তে আস্তে নিজের মা-বাবা, পরিবার, নিজের বুলি, নিজের অতীত ভুলিয়ে দেওয়া।

মা-বাবাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন এই হাজার হাজার অস্ট্রেলীয় ভূমি-সন্তানদের আজকে বলা হয় ‘স্টোলেন জেনারেশনস’। আস্ত কয়েকটা প্রজন্মকে গিলে ফেলেছিল এই ঔপনিবেশিক নীতি। সেই গিলে খাওয়াকেই ‘চুরি’ বলে মেনে নিয়েছে আধুনিক অস্ট্রেলিয়া। সেই ‘চুরি’র জন্যই আট বছর আগের এক দিনে ক্ষমা চেয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রুড।

গত কয়েক বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার বাইরের পাঠকেরা আস্তে আস্তে চিনছেন সেখানকার আদি বাসিন্দাদের মধ্যে থেকে উঠে আসা কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীদের। তাঁদের লেখা-আঁকাকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে বিভিন্ন সংস্থা। একই সঙ্গে পাল্টানো হয়েছে নানা আইন, স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে ভূমি-সন্তানদের বঞ্চিত এবং অবদমিত হওয়ার ইতিহাসকে।

australian_art

ভূমিপুত্র বা কন্যাদের নানা আখ্যানে যেমন রয়েছে দীর্ঘশ্বাস, তেমনই লুকিয়ে রয়েছে প্রচণ্ড রাগ। বর্ণবৈষম্যের কাঁটায় বিদ্ধ সেই সব গাথা পড়ে চমকে উঠতে হয়— এত নির্মম হতে পারে মানুষ? আমদেরও তো রয়েছে দু’শো বছরের ঔপনিবেশিকতার ইতিহাস। কিন্তু যখন জানতে পারি, শ্বেতাঙ্গ ‘প্রভু’রা ভূমিশিশুদের গলা পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে (হ্যাঁ, জ্যান্ত শিশুদের), তাদের মাথার ওপর বল রেখে গল্ফ খেলত, বলে না লেগে গল্ফের শক্ত ক্লাবটি প্রায়শই সপাটে গিয়ে পড়ত বাচ্চাটির মুখে-মাথায়, ফেটে যেত খুলি, তখন জালিয়ানওয়ালা বাগ-সহ আমাদের দেশের কত শত নির্মমতার কাহিনীও যেন কেমন ফিকে হয়ে যায়।

জন্মদাত্রী মায়ের সঙ্গে আলি

জন্মদাত্রী মায়ের সঙ্গে আলি

১৯৯৫ সালের ১১ মে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল মাইকেল লাভার্শ একটি কমিশন গঠন করেন। লক্ষ্য, অনাথআশ্রমে বেড়ে ওঠা ভূমিশিশুদের তাদের আসল পরিবার সম্পর্কে খোঁজখবর দেওয়া। এর কয়েক বছর আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এই দাবি তুলছিল। তথ্যের অধিকারের সেই দাবিকে মেনে নিয়েই কমিশনটি গঠন করা হয়। ১৯৯৭ সালের ২৬ মে ‘ব্রিংগিং দেম হোম’ নামে ৬৮০ পাতার একটি রিপোর্ট পার্লামেন্টে পেশ করে সেই কমিশন। সেই রিপোর্টে ‘নিখোঁজ প্রজন্ম’ সম্বন্ধে প্রচুর তথ্য পাওয়া যায়। অনেকেই খুঁজে পান তাঁর বাবা-মাকে, জন্মের ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর পরে। ঠিক যেমন পেয়েছিলেন আলি।

‘ব্রিংগিং দেম হোম’ রিপোর্টটি প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘পুনর্মিলনের’ একটা বড় অধ্যায় শুরু হয়ে যায়। জানা যায়, ভূমি-সন্তানদের মধ্যে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ, অর্থাৎ দু’জনের মধ্যে এক জন মানুষ ছিলেন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। প্রত্যেকেই তখন কাউকে না কাউকে খুঁজতে শুরু করেন— কেউ নিজের মা-বাবাকে, কেউ বা আবার ভাইবোনকে।

২০০৭ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেন কেভিন রুড। তার ঠিক আট দিনের মাথায়, ১১ ডিসেম্বর, রুড জানান, সরকারি ভাবে বিবৃতি দিয়ে দেশের আদি বাসিন্দাদের কাছে ক্ষমা চাইবে তাঁর সরকার। শুধু তাই নয়, সেই ক্ষমাপ্রার্থনার বিবৃতি তৈরি করা হবে ভূমি-সন্তানদের গোষ্ঠী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই। ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্টে সেই ক্ষমাপ্রার্থনা পড়ে শোনান প্রধানমন্ত্রী নিজে।

সাড়ে আট বছরের পুরনো হলেও এই ক্ষমা চাওয়ার গল্পটা বলা দরকার ছিল। কারণ দিন কয়েক আগে কেভিন রুড নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘সে দিনের সেই ক্ষমাপ্রার্থনার পরে অনেকটা পথ হেঁটে এসেছি আমরা। কিন্তু আজও যখন কোনও ভূমি-সন্তান তাঁর ছিন্নবিচ্ছিন্ন ছেলেবেলার কথা বলেন, শিউরে উঠি। মনে হয়, ওই-টুকু ক্ষমাপ্রার্থনা কি যথেষ্ট ছিল!’’

kevin_rudd_apology

পুনশ্চ:

 

 

 

Comments (2)
  • Anamitra Chatterjee Anamitra Chatterjee says:

    দারুন লিখেছ সীমন্তিনী… অস্ট্র্লিয়া মানে আমরা স্টিভ ও-কে জানি, যিনি বাংলার অনাথ আশ্রমে ডলার ঢেলে আত্মপ্রসাদ অর্জন করতে আসেন। ক্রিকেট মাঠে বিয়ারের ফোয়ারা ছড়ানো দর্শকরাই যে শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, জানা প্রয়োজন।কবিকে অভিনন্দন।

  • SEEMANTINI GUPTA SEEMANTINI GUPTA says:

    ধন্যবাদ অনমিত্রদা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

*

 


 
  • Recent Posts

     
  • Follow us

    FacebookTwitterGoogle+RSS Feed
     
  • Share

     
  • Facebook

     
  • Archives

     
  • May 2024
    M T W T F S S
     123456
    78910111213
    14151617181920
    21222324252627
    282930  
     
  • Recent Comments

     
  • Tags

     
  •  

    top