No announcement available or all announcement expired.
sandipta_chatterjee

Medianest: Remembering Sandipta Chatterjee

 

​A joint endeavour of Sandipta's friends and
School of Media, Communication and Culture, Jadavpur University




ju
 

দেশভাগের মহাফেজখানায়

 
Prasenjit Sinha (January 2, 2017)
 
FacebookTwitterGoogle+PinterestLinkedInWhatsAppShare

india-1947-partition-archives

সবারই বয়স বাড়ে। স্মৃতিরও। একদিন সেই স্মৃতির চোখে চালশে পড়ে। বর্তমানের আলসেতে দাঁড়িয়ে অতীতকে তখন ধূসর মনে হয়।

দেশভাগ যে দগদগে স্মৃতির জন্ম দিয়েছিল, দুই বাংলার মানুষের মনে, তার বয়সও সত্তর ছুঁতে চলল। দেশভাগের ইতিহাস, সাহিত্য, চলচ্চিত্রে সেই স্মৃতি আজও টাটকা। তবু সেখানে যা ধরা রয়েছে, তা হয়তো যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন ছিল আরও। কারণ সাহিত্য, চলচ্চিত্রে যা বিধৃত হয়েছে, তা মুষ্টিমেয়র বা ক্ষেত্রবিশেষে একেবারেই ব্যক্তিবিশেষের অভিজ্ঞতা।

কিন্তু এর বাইরেও ইতিহাস আছে। যে ইতিহাস একেবারেই সাধারণ মানুষের। যাঁদের বুকের কষ্টকে কোনওদিন সেভাবে প্রকাশ করার সুযোগ পাননি। পরিবারের চৌহদ্দির মধ্যেই তা রয়ে গিয়েছে। মুশকিল হল, সেই ইতিহাসও এবার ক্রমশঃ হারিয়ে যাচ্ছে। দেশভাগ ক্রমশ বাঙালির স্মৃতিতে এককোণে পড়ে থাকা আরও অনেক ঘটনার একটি হয়ে থেকে যাবে, যদি না তার সংরক্ষণ হয়। একবারে যে তেমন প্রচেষ্টা হচ্ছে না, তা-ও নয়।

কিছুদিন আগে পেনসিলভেনিয়ায় দেশভাগের উপর একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করা হয়েছিল। পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত সেই আলোচনাসভার সূত্রেই 1947 ARCHIVE নামে একটি ডিজিটাল মহাফেজখানার সন্ধান পাই। http://1947partitionarchive.org/ । যেখানে দেশভাগের প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্য, বই, দেশভাগের উপর তৈরি বিবিসি’র তথ্যচিত্র, এবং বিভিন্ন ভাষায় তৈরি সিনেমা এবং অন্য দলিলের সুলুকসন্ধান পাওয়া যাবে। গবেষক-ছাত্রদের জন্য তো বটেই, এমনকী, সাধারণ মানুষ যাঁদের এ বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে, তাঁদের কাছেও ওই ওয়েবসাইটটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তি, পাকিস্তানের জন্ম এবং এই সূত্রে কয়েক লক্ষ মানুষের ছিন্নমূল হওয়ার ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে অন্যতম মাইলফলক। সেই ইতিহাসকে সর্বতোভাবে সংরক্ষণের একটা সুন্দর প্রয়াস বলা যেতে পারে এই ওয়েবসাইটটিকে। কিন্তু আমার কাছে এই ওয়েবসাইটের যে অংশটি সবচেয়ে মহত্ত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, তা হল এর ওরাল হিস্ট্রি বিভাগটি। দেশভাগ যাঁরা দেখেছেন, বা যাঁরা ওই ঘটনায় বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হয়েছেন, তাঁদের সাক্ষাৎকার রয়েছে এই বিভাগে। তবে এগুলোকে আলগোছে নেওয়া সাধারণ সাক্ষাৎকার ভাবা অনুচিত হবে। দেশভাগের অভিজ্ঞতা ওই সমস্ত মানুষের মনে যেভাবে রেখা ফেলেছে তার দৃশ্যশ্রাব্য নথি তো বটেই, পাশাপাশি দেশবিভাজনের আগে ও পরে এইসব মানুষের বিশদ ব্যক্তিগত তথ্যও নথিভুক্ত করা হচ্ছে। একজন মানুষকে তাঁর সামাজিক প্রেক্ষাপটে না দেখলে তো বোঝা যাবে না, দেশভাগ মানুষটির উপর কী প্রভাব ফেলেছিল। এই প্রক্রিয়া এখনও জারি রয়েছে।

ইতিহাস শুধু রাজা উজির, বড়বড় যোদ্ধাদের কথা লিখে রাখে। অতীতে ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতায় রচিত সেই ইতিহাসকে কি সম্পূর্ণ বলা চলে? এ নিয়ে বিতর্ক বিবাদ নতুন নয়। দেশে একাধিকবার ইতিহাসলিখিয়েদের রঙ নিয়ে চর্চা হয়েছে। তার চেয়ে বেশি তর্কবিতর্ক হয়েছে যারা তাঁদের দিয়ে সেই ইতিহাস লেখানোর চেষ্টা করেছেন, তাঁদের নিয়ে। ইতিহাসকে প্রভাবিত করার ইতিহাসও তাই, নেহাত ছোট নয়।

আবার নিরপেক্ষ ইতিহাস বলেও কিছু হয় কি না, আমার অন্তত জানা নেই। বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাসের তাই, স্বরূপটাও অগোচরেই থেকে গিয়েছে। কখনও কখনও একথাও মনে হয়েছে, ইতিহাসের নিদর্শন দলিল দস্তাবেজ যেখানে যত বেশি, সেখানে অতীত বাস্তবের অনেক কাছাকাছি।

ইতিহাস সাধারণত কিছু ছেঁড়া ছেঁড়া প্রামাণ্য দলিল, কিছু খনন এবং তার ফলে পাওয়া সেই সময়ের সাক্ষ্যবাহী কিছু জিনিসপত্রে নিহিত থাকে। সেইসব জিনিসে সময়ের কিছু দাগ থেকে যায়। সেটাকে যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করার কাজটা করেন ইতিবহাসবিদেরা। সেই ব্যাখ্যায় নিজস্বতার কিছু ছাপ অজান্তে বা কতকটা জ্ঞাতসারেই তাঁরাও রেখে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক। সেভাবেই ইতিহাস রচনা হয়ে আসছে এতদিন। কাজেই নিরপেক্ষতার বিচার সেখানে বারে বারে আসবে এবং কোনও কাজই এই তর্কের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না। কিন্তু এই মৌখিক ইতিহাসের বিষয়টি অনেকটাই আকরতথ্য বলা যেতে পারে।

ওই ওয়েবসাইটের পিছনে রয়েছেন বিশিষ্টজনেরা, যাঁদের হদিশ এই সাইটেই পাওয়া যাবে। আর রয়েছেন কিছু ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং সংস্থা। যারা এই প্রক্রিয়াটি জারি রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছেন।

কারা করছেন এই সাক্ষাৎকার রেকর্ডিংয়ের কাজটি? মূলত বিভিন্ন দেশের ছাত্রছাত্রীরাই। তবে হঠাৎ করে যে কেউ এর অংশ হতে পারবেন না। মৌখিক ইতিহাস রেকর্ডিংয়ের নিয়মকানুনে কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট কঠোর। এমনকী, রেকর্ডিংয়ের সময় কী করা যাবে আর কী করা যাবে না, তা যেমন বলা হয়েছে, তেমনই ফ্রেম কেমন হবে, তারও বিশদ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতেই স্পষ্ট হয়, যেমন তেমন করে কাজটা করা মোটেই এঁদের উদ্দেশ্য নয়। এই তথ্য, ভিডিও ইত্যদি কোনও একটা দেশের সম্পত্তি নয় । এই বিশাল তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষিত থাকবে ডিজিটাল ক্লাউডে।

মৌখিক ইতিহাস সংগ্রাহকদের বিভিন্ন স্তরে ভাগ করেছেন এঁরা। রয়েছেন, ওরাল হিস্ট্রি স্টুডেন্ট ইনটার্ন, সিটিজেন হিস্টোরিয়ান, ওরাল হিস্ট্রি স্কলার ইত্যাদি পদ। ছাত্রছাত্রীরা স্বল্প মেয়াদে এই ধরনের কাজ করতেই পারেন। এর জন্য তাঁদের সম্মানদক্ষিণারও ব্যবস্থা রয়েছে। এই ধরনের কিছুপদে ছাত্রীছাত্রীদের দরখাস্তও চাইছেন এঁরা। ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। এর জন্য অনলাইনেই তাঁদের একটা কর্মশালায় যোগ দিতে হবে। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা এতে যোগ দিতে পারবেন।

এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, ভারতের পশ্চিম অংশের যত মানুষের সাক্ষাৎকার এই সাইটে রয়েছে, তার চেয়ে অনেক কম রয়েছে পূর্বাংশের মানুষের। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের তত মানুষের সাক্ষাৎকার কিন্তু এখনো নথিভুক্ত হয়নি। এই ইতিহাসকে আরও সম্বৃদ্ধ করার দায়িত্ব এবং সুযোগ দুই রয়েছে এই প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের কাছে।

ঘটমান বা সাম্প্রতিক অতীতে ঘটে যাওয়া কোনও বড় ঘটনাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ সংরক্ষণের এই পদ্ধতি বেশ ভাল বলেই মনে হয়। এই ধরনের আরও বেশি সাইট তৈরি হওয়া প্রয়োজন। ভবিষ্যত প্রজন্মেরও সুযোগ থাকে ইতিহাসকে চিরবর্তমান হিসাবে দেখার, শোনার।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>

*

 


 
  • Recent Posts

     
  • Follow us

    FacebookTwitterGoogle+RSS Feed
     
  • Share

     
  • Facebook

     
  • Archives

     
  • May 2024
    M T W T F S S
     123456
    78910111213
    14151617181920
    21222324252627
    282930  
     
  • Recent Comments

     
  • Tags

     
  •  

    top